সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

হিজলতলির ভূত



  • হা ফ সা  আ ক্তা র
  • শহীদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়
  •  নবম  শ্রেণি

গ্রামের নাম হিজলতলি । সেই গ্রামের এক পরিবার মনির মিয়ার । তারা এক ভাই এক বোন ।সে গ্রামে থাকে, আর তার বোন মিহিতার শহরে বিয়ে হয়েছে । মিহিতার দুই মেয়ে মৃত্তিকা আর মোহনা । তাদের বাবা একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক । তার স্কুল বন্ধ হয়না কিছু কিছু বিশেষ উপলক্ষ্য ছাড়া । মৃত্তিকা ক্লাস ফাইভে পড়ে, আর মোহনা টু’তে পড়ে । এবার তাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ । তারা মামার বাড়িতে যাবে বলে বায়না ধরেছে । মিহিতার মা-বাবা নেই বলে তার যেতে ইচ্ছে করেনা, কিন্তু এবার না করার জো নেই মেয়েদের আবদার।
তাই তারা সোমবারদিন হিজলতলিতে পৈাছাল । মেয়েরা তো ভীষণ খুশি , তাদের মামাতো বোন ভাই-বোনের সাথে ভিষণ মজা করছে । ওদের নাম মনি ও জয় । মনি ক্নাস থ্রী’তে পড়ে আর জয় ক্লাস ফোর এ পড়ে । দুজর পিঠা-পিঠি , মামা বাড়িতে গিয়ে তাদের তিনদিন কাটল ভীষন আনন্দে ।
শুক্রবার দিন বিকালে মামার সাথে হিজলতলির হাটে যাবে বায়না ধরল মোহনা, জয়, মনি, মৃত্তিকা মামা আর না করল না । চারজনকে নিয়ে যখন মামা হাটে পৈাছালেন তখন মামার এক পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হল । তিনি এবং মামা দুজনে তাদেরকে অনেক মুড়ি-মুড়কি , সন্দেশ আরও অনেক কিছু কিনে দি্লেন । বাড়ি ফিরতে তাদের রাত হয়ে গেল । রাস্তায় মনি আর মোহনা মামাকে জড়িয়ে ধরে হাটছিলো । মৃত্তিকা আর জয় তাদের কাছে কাছেই । এই হিজলতলির পরিবেশ খুব সুন্দর কিন্তু যানবাহন বলতে রিক্সা আর কিছুই নেই । রাস্তা ঘাটও তেমন ভালো না । মৃত্তিকার মামাদের বাড়িটার রাস্তাটা নদীর ধার দিয়ে তাই রাতে এখানে রিক্সা ও আসেনা । হিজলতলির হাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে নদীর ঘাট । তারা মূলত ওখানেই যাচ্ছিল , হঠাৎ তাদের সামনে দিয়ে সাদা কাপড় পড়ে কিযেন একটা চলে গেল , বাচ্চারা চিৎকার করে উঠল মামা’’ মামা’’ বাবা’’ মা মা মা !!!! মামা বাচ্চাদের সামলাতে সামলাতে দেখলো একটা ঝারুল গাছের মাথা মাটিতে লেগে যাচ্ছে আবার ওপরে ওঠছে । অন্য গাছগুলো বেশ শান্ত , এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মামাও ভয় পেয়ে গেলেনে । তখনি হঠাৎ একজন সাদা ধবধবে চুলওয়ালা বুড়ি কোথা থেকে এসে মনি আর মোহনার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল…. সাহায্য চাই….। মামা জিঙ্গেশ করল কে আপনি…? তিনি বললেনে সেটা জানতে হবে না । দেখতে দেখতে সাই করে ওড়ে গেল মনি আর মোহনাকে নিয়ে । জয় , মৃত্তিকাকে নিয়ে মামাও ছুটল পেছন পেছন ,, ঐ বুড়িটা এবার হিজলতলির মন্দিরের ভাঙা সিড়িতে মনি আর মোহনাকে নামিয়ে দিয়ে সাই সাই করে উড়ে গেছে । ঐ মন্দির থেকে মামার বাড়ি বেশি দূরেনা । তখন একটু পড়ে মামা ও গিয়ে সেখানে পৈাছাল । মৃত্তিকা আর জয়কে নিয়ে ।
মনি আর মোহনা শান্তি পিসির সাথে বসে গল্প করছে । আসলে এই শান্তি পিসি ছিল মন্দিরের সেবিকা , সে কিছুদিন আগে মারা গেছে । এমন সময় মামার চোখে পড়ল মোহনা আর মনিকে আর তাদের সাথের এই শান্তি পিসিকে । এই শান্তি পিসি মামাকে ভিষন আদর করত ওদের পেজোতে আসলে । মামাতো ওকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন , মামা এই আশ্চর্য কান্ড দেখে হতবুদ্ধর মতো দাড়িয়ে রইল । এমন সময় জয় তার বাবাকে ডাকল বাবা কিছু কর । তখন মামা কালিমা পড়ে এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে ঐ শান্তি পিসির দিকে ছুড়ে মাড়ল , সাথে সাথে শান্তি পিসি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । এখন বেশি রাত নয় আটটা কি নয়টা বাজে তবু এই গ্রামের জন্য নিশুচি রাত ছিল কেউ ছিলনা আশে পাশে !
মাঝে মাঝে ঐ গ্রামে চুর ডাকাত আসলে কেউ এসে এই মন্দিরের শঙ্খ ধ্বনিতে আওয়াজ করলে আশেপাশের বাড়ি থেকে মানুষ ছুটে আসত । তাই মামা তখন ঐ কাজটা করতে শঙ্খ ঘন্টার কাছে গেল তখন মৃত্তিকা মামাকে থামিয়ে দিল । বলল মামা আমরা তো কাছেই চলে এসেছি তো এখন সবাইকে বিরক্ত করার কি ধরকার ? তখন আবার মামা চার জনকে নিয়ে বাড়ির দিকে চলল । বাড়িতে গিয়ে মামা উঠান থেকেই সবাইকে ডাকলেন, মা, মাসি দুজনেই ঘর থেকে ছুটে আসলেন, পাশের ঘর থেকে ওদের বাবা, তখন ওরা এক এক করে সব ঘটনা খুলে বলল … ওরা সবাই অবাক হয়ে যায় যে , এই পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু আছে ? সবার মূখে একই কথা , তখন মৃত্তিকার বাবা বলেন আমরা মুসলমান তাই আমাদের মানতে হবে যে শয়তান আর জ্বিন এই দুটোই আছে । এমন সময় মোহনা আর মনি তাদের মাকে জড়িয়ে ধরে ।ওমা একি জ্বরে যে দেখছি তাদের গা পুড়ে যাচ্ছে !পরদিন সকাল বেলা মৃত্তিকার বাবা বলছে আজই শহ্ররে ফিরে যাবেন । ওদের ডাক্তার দেখাতে হবে , ওরা ভয় পেয়ে গেছে । রবিবার সকালে মনি একদম সুস্থ হয়ে গেল, কিন্তু মোহনার মাথা ব্যাথাটা এখনো কমেনি তবু ওরা চলে যাচ্ছে । মৃত্তিকারা সকাল আট’টার ট্রেনে শহরে দিকে চলল, আশ্চর্য ভৌতিক অভিঞ্জতা নিয়ে । মোহনা বলছে ,মা জানো আমি স্কুলে গিয়ে সবার সাথে বলব । জয় আর মনিদের ও স্কুল খোলা হয়ে গেছে তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে শুরু করেছে । এই ভয়টা ওদের কেটে গেল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ