সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

কালবৈশাখী ও লীলাদের রাত


প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। প্রকৃতির সব আক্রোশ যেন দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে সব। আমাদের গোয়ালে দুটি গরু। লীলা আর সালু। বড় দুঃখী ওরা।
গোয়ালঘরের অবস্থা নড়বড়ে। পুরাতন অকেজো টিন জোড়াতালি দিয়ে আমরা নিজেরাই কোনমতে একটা ছাপড়া দাঁড় করিয়েছি।
ওরা সেই ঘরে ঠাঁয় দাঁড়িয়েই রাত কাটায়।
লীলা বড়ই অদ্ভুত স্বভাবের। ওরা আমার মা বাবার সংগ্রামের ভাষাটা বুঝে। আমি ব্যস্ত বাবার সহচর না হলে খেপে যায় সে।
বছর ধরে সে দুগ্ধদান করে যাচ্ছে। এই সময়ে সেটা করার কোন সম্ভাবনাই ছিল না, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে সেটা করে যাচ্ছে। আল্লাহ এই চমৎকার নিয়ামত আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই লাল গরুটি লীলাবতী নয় মায়াও বাঁধাতে পারে মনিবের মনে।

লীলার ছেলের নাম সালু। রঙ সাদা বলে এই নাম। বিদ্রোহী একটা ভাব থাকলেও সে আমাদের সামনে একেবারে শান্ত স্বভাবের। দেখা হলেই, দেখা যাচ্ছে গলা বাড়িয়ে দিচ্ছে হাত বুলানোর জন্য। পাশে বসলে তার কোমল গলার স্পর্শে খুশি করে দিচ্ছে।

আজ এই ঝড়ের রাতে লীলা আর সালু সারাটি রাত কাটাবে ভেজা স্যাঁতসেঁতে মাটিতে দাঁড়িয়ে। ওদের শরীরও ভিজবে জলে। আনন্দের নয়, সেটা দারিদ্রের উপহার।

একদিন তারা ঝড়ের রাতে টিনের চালে ঝুম শব্দ শুনে উষ্ণ ঘরে আনন্দে আজকের এই বেদনার রাতের কথা মনে করবে।
একদিন এমন হবে। সেই একদিনের অপেক্ষায় ওরা দাঁড়িয়ে ভিজছে। ঝড়ের বেগ বাড়ছে, বাড়ছে বৈশাখের রাত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ