সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

শেখ রেয়াজ উদ্দিন আহমদ

সোহরাব উদ্দিন খান : বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালে ভারতের আগরতলায় অবস্থিত সোনার বাংলা যুব শিবির প্রধান অধ্যাপক শেখ রিয়াজ উদ্দিন আহমদ গতকাল ২৬ শে জুন রবিবার বেলা ১২.৩০ মি. ময়মনসিংহ শহরের বলাশপুরস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন (ইন্না…….রাজিউন)।
একই দিন বিকাল ৫.০০ ঘটিকায় “দিলকুশা জামে মসজিদ” প্রাঙ্গনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের পর বাদ আসন নামাজে জানাজা শেষে মরহুমের লাল নিজ গ্রাম গফরগাও থানার শেখপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। অধ্যাপক শেখ রেজায়উদ্দীন আহমদ ১৯৩৯ সালের ৮ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানাধীন সেখপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ।
শেখ রেয়াজউদ্দীন আহমদ নিজ গ্রামের পার্শ্বে তললী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪৮ সালের দিকে কিছুকাল শ্রীপুর মধ্য ইংরেজী স্কুলে পড়াশুনা করেন। অতপর ১৯৫০ সালে সিংহশ্রী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং জামালপুর আশেদ মাহমুদ কলেজে ভর্তি হন।
সেখান থেকে ১৯৬১ সালে আই.এ পাশ করেন এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাস ও কৃষ্টি বিষয়ে সম্মানসহ øাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই শেখ রেয়াজউদ্দীন আহমদ রাজনীতির প্রতি আকৃষ্টি হন। সিংহশ্রী স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন তিনি জনাব তাজউদ্দিন আহমেদের সংস্পর্শে আসেন এবং রাজনীতিতে হাতে খড়ি নেন। ১৯৫৫ সালে গফরগাও থানা আওয়ামীলীগের সদস্য পদ লাভ করেন।
১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে পরিচিত হন এবং তারই প্রেরণা ও সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগ দেন এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে শ্রীপুর ও গফরগাঁও থানায় ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রমে শেখ রেয়াজ উদ্দিন আহমদ আওয়ামীল রাজনীতিতে নির্বিষ্টভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে শ্রীপুর থানার নির্বাচন পরিচালনায় এবং আওয়ামীলীগ পুনগঠনের কাজে সক্রিয় অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে সারা দেশব্যাপী চলছে প্রবল গণআন্দোলন।
তিনি এই আন্দোলনে যোগদান করেন এবং ১৯৭০ সালে গফরগাও থানায় নির্বাচন পরিচালনা কাজে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমদিকে মেঘালয়ের ঢালু সেক্টরে যোগ দেন এবং পরে কলকাতার প্রিন্সেভ স্ট্রীটের কার্যালয়ে কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পান। অত:পর প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগরতলায় সোনার বাংলা যুব শিবিরে শিবির প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। যুদ্ধাশেষে বীরবেশে দেশে ফিরে আসেন এবং দেশগঠনের মনোনিবেশ করেন।
১৯৭৩ সালে গফরগাও থানার নির্বাচন পরিচালনার কাজে অংশ নেন। শেখ রেয়াজউদ্দীন আহমদ সরকারি ও বেসরকারি কাজে বহুদেশ ভ্রমন করেন। ১৯৬৭ সালে শিক্ষা সফরের অংশ হিসাবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ভ্রমন করেন। ১৯৭৮ সালে ভারত, ইরাক, ইরান ভ্রমন করেন। একই বৎসর The Theoritical & Practical of Lenin Co-operative in U.S.S.R শীর্ষক সেমিনারে যোগদানের উদ্দেশ্যে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমন করেন।
অধ্যাপক শেখ রেয়াজউদ্দিন আহমদ ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গফরগাও এলাকায় প্রতিদ্বন্দিতা করেন। রাজনীতির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে তিনি একজন শিক্ষক। শিক্ষা জীবন শেষ করেই তিনি শিক্ষকতার কাজে অংশ নেন। ১৯৬৫ সালে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ও পরে কাওরাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬৭ সালে ত্রিমোহনী স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবেক যোগদান করেন এবং শ্রীপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ সালে তিনি কাওরাইদ গয়েশপুর কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। কিছুদিন আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজে অধ্যাপনা করেন। শিক্ষকতা ছাড়াও শেখ রেয়াজউদ্দিন আহমদ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে নারী শিক্ষার জন্য সাধুয়া গ্রামে স্বনামে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের আজীবন সদস্য। গফরগাও-বরমী সড়কের স্থপতি, পাগলা থানার অন্যতম স্থপতি। অধ্যাপক শেখ রেয়াজউদ্দীন আহমদ একন বিদগ্ধ ও একনিষ্ঠ আওয়ামীলীগ কর্মী হিসাবে এই এলাকায় বহুল পরিচিত এবং সমধিক প্রসিদ্ধ। রাজনীতির পাশাপাশি একজন নিবেদিত প্রাণ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ শহরে বসবাস করছেন। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, একাধারে বহু ভাষাবিদ ও পন্ডিত ব্যক্তি। শ্রীপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
তার একনিষ্ঠ প্রচেষ্ঠার ফলে শ্রীপুরের ইতিহাস ও কৃষ্টি , ভাওয়ায়ে হাক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ


  1. শ্রীপুরের ইতিহাস ও কৃষ্টি (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩)
    -শেখ রেয়াজ উদ্দীন আহমদ(সম্পাদনায়য়)


    বইটা কোথায় পাওয়া যেতে পারে?
    কোন আইডিয়া আছে?

    উত্তরমুছুন