সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

সুখী মানুষ

ই য়া ছি ন  আ হ মে দ  রা না

প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে সে দুবার ছাদ থেকে লাফ দেবার পরিকল্পনা করেছে। ছেলেটি ছাদের উপর থেকে একটা পাথরের টুকরো নিচে ফেলার পর দেখল, পাথরটি দু ভাগ হয়ে গেছে।
সুন্দর একটি পাথরের দু ভাগ হয়ে যাবার দৃশ্য তাকে ভীত করে ফেলেছে; সে মরতে পারছে না। আবার বেঁচে থাকতেও চাইছে না।
কিছুদিন আগে আমাকে একজন জানাল এক বছর ধরে তার চাকরি হচ্ছে না। পকেটে একদম শুন্য টাকা নিয়ে সে একের পর এক ইন্টার্ভিউ দিয়ে বিষণ্ণতায় ভুগছে।
কেউই ইচ্ছে করে ডিপ্রেশনে থাকে না। তবু একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে একি ঘটনায় একজন খুব ডিপ্রেশনে ভুগছে অন্যজন একদম স্বাভাবিক থাকছে। স্বাভাবিক থাকার আশ্চর্য এক নিয়ম আছে। সেটা বলছি...
এক ছেলেকে আমি চিনি, তার বাবার প্রায় সব টাকা লোকসানে পরে ফ্ল্যাট , জমি বিক্রি করে দু রুমের ভাড়া বাসায় উঠতে হয়েছে। ছেলেটি এমবিএ পাশ করার পর তিন বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে ডিপ্রেশনে নেই। তার মুখে সারাক্ষণ একটা হাসি লেগেই থাকে।
ছেলেটি খোদার কাছে কী মিনতি করে জানেন ?
‘ হে খোদা, আমি জানি আমাকে দেয়া কষ্ট গুলো আমার প্রতি তোমার পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই না। আমি কষ্ট তুলে নেবার প্রার্থনা করে এই পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে যেতে চাই না। আমি শুধু চাই তুমি আমাকে এই কষ্টটা সহ্য করার শক্তি দাও’
এই ছেলেটা তার নিয়তি আল্লাহপাকের হাতে তুলে দিয়েছে। তার ধারণা আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাকে কষ্ট দিয়ে আসলে পরীক্ষা করছেন। একটু সহ্য করতে না পারলে আর মানুষ হলাম কেন?
আমাদের এলাকায় আনোয়ার ভাই নামে একজন মানুষ আছে। এই মানুষটা বুয়েট থেকে পাশ করার পাশা পাশি আইবিএ থেকে এমবিএ করেছেন। তার কাপড় বলতে দুটা মাত্র পাঞ্জাবী।
এই মানুষটা বাসায় যত সময় থাকেন তার চেয়ে বেশি থাকেন মসজিদে। এই পৃথিবী লোভ লালসা খ্যাতি নিয়ে তার কাছে যতবার এসেছে তিনি পাশ কাটিয়ে কেটে গেছেন। তার চোখের দিকে আমি যতবার তাকিয়েছি ততবারই মনে হয়েছে পৃথিবীতে দাড়িয়ে আমি কোন জান্নাতবাসীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।
একদিন রাস্তায় তাকে দেখে আমি গাড়ি থামিয়ে আমার গাড়িতে আসার অনুরোধ করলাম। জবাবে তিনি জানালেন, মসজিদ থেকে বাসায় আসার পথে রোজ পাঁচবার পথের মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে দিতে আসাটা তার অভ্যাস। গাড়িতে চড়ে এলে এই নিয়মের বেঘাত ঘটবে।
মনোবিজ্ঞানীরা সুখী মানুষদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হিমশিম খায়। পৃথিবীর প্রথম একশ ধনী মানুষের অধিকাংশই অসুখী। প্রথম দশ জন ক্ষমতাবান মানুষই হাই ডিপ্রেশনের শিকার।
আনোয়ার ভাইদের জীবনে কোন বিষণ্ণতা থাকে না। যে মানুষ এক বিন্দু কষ্ট দেখলে , নিশ্চয়ই খোদা পরীক্ষা নিচ্ছেন ভেবে বুক ভাসিয়ে দেয় – তাকে তুমি দুনিয়ার সব কষ্ট এক করেও যন্ত্রণায় ফেলতে পারবে না।
এই পৃথিবীর সব কষ্ট ভুলে যাবার জন্য হযরত আলী ( রাঃ ) এর একটা উক্তিই যথেষ্ট- ‘সব কষ্টের মূলে রয়েছে দুনিয়ার প্রতি আসক্তি’...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ